ঢাকা ০৮:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বরিশালে ৪২০টি সিসিটিভি ক্যামেরা ৫ বছর ধরে অচল

  • স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ১০:২১:২০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৩
  • ৯৫ খবরটি দেখা হয়েছে

ডিজিটাল যুগ পার করে বাংলাদেশ যখন স্মার্ট যুগে হাঁটছেন ঠিক সেই সময়ও অন্ধকার যুগে পড়ে রয়েছে বিভাগীয় শহর বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকা। ক্ষমতার পালাবদলে বিসিসিতে মেয়র এসেছেন আবার চলেও গেছেন। কিন্তু নগরবাসীর নিরাপত্তা বিবেচনায় ছিল না কোন মাথাব্যথা। ফলে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা ৪২০টি সিটি ক্যামেরা অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে টানা ৫ বছর ধরে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের তত্ত্বাবধানে ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে বসানো হয়েছিল ৪২০টি সিসি ক্যামেরা। এর সঙ্গে নগরভবনে করা হয়েছিল এর কন্ট্রোল রুম। ক্যামেরাগুলো স্থাপনের কিছুদিন যেতে না যেতেই বেশিরভাগই অচল হয়ে যায়। ক্যামেরাগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা বিসিসি কর্তৃপক্ষের থাকলেও বিগত পাঁচ বছরে তারা কোনো ধরনের খোঁজখবর নেয়নি। যেকারণে বর্তমানে বেশিরভাগ সিসি ক্যামেরাগুলোর অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারের এতগুলো টাকা খরচ করে ৪২০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হলেও তা নগরবাসীর কোনো ধরনের উপকারে আসেনি।

বরিশাল সিটি করপোরেশনে প্রকৌশল ও প্রশাসনিক দপ্তরের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে আজ পর্যন্ত সিসি ক্যামেরাগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তো দূরের কথা, সামান্য খোঁজখবরও নেয়নি। তবে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ ক্ষমতা গ্রহণের পর এনেক্স ভবন ও সিটি করপোরেশনের মূলভবনে কয়েকটি সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছেন মাত্র।

বিসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার চলতি দায়িত্বে থাকা স্বপন কুমার দাস বলেন, বিগত মেয়রের আমলে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছিল, তবে তার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই। সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে নগরবাসীর সুবিধার্থে ৪২০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হলেও ক্যামেরাগুলো নগরবাসীর কোনো ধরনের উপকারে না আসায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নগরবাসী।

এ ব্যাপারে সচেতন নাগরিক কমিটির জেলার সাবেক সভাপতি প্রফেসর শাহ্ সাজেদা বলেন, বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ যদি নগরবাসীর কাছে জবাবদিহিতার কথা চিন্তা করতো তাহলে অবশ্যই সরকারের কোটি টাকা ব্যয়ে লাগানো সিসি ক্যামেরাগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতেন।

বিসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের ক্ষমতার আমলে ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয় ৪২০টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হলেও ৫ বছর ধরে সব ক্যামেরাই অচল অবস্থায় রয়েছে। তবে কি কারণে ক্যামেরাগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি সে বিষয়টি আমার জানা নেই।

বাসদের জেলা শাখার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, জনগণের অর্থ ব্যয় করা এই সিসি ক্যামেরাগুলো নগরবাসীর কোনো কাজেই আসেনি। এটা জনগণের সঙ্গে এক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বিসিসি। এটা বিসিসির ব্যর্থতাই মনে করছি। তাই অবিলম্বে এই ক্যামেরাগুলো সচল করে নগরবাসীকে নিরাপত্তাহীনতার হাত থেকে রক্ষা করা হবে বলে আমি আশা করছি।

মনীষা চক্রবর্তী আরও বলেন, নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপিত ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার সবই অচলাবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে ক্যামেরাগুলো অচল থাকার কারণে নগরীতে দিনদুপুরে অপরাধে মাত্রা বেড়েই চলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অজান্তেই অনেকটা নিরাপদে পালিয়ে যাচ্ছে অপরাধী চক্রের সদস্যরা।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, নগরবাসীর নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনা ঘিরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছিল। চালু হওয়ার দুই মাসের মাথায় এসব ক্যামেরার প্রায় ৮০ ভাগ সংযোগ তার (অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল) চুরি হয়ে যায়। আবার বেশ কিছু ক্যামেরায় কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়।

ফলে এসব ক্যামেরা সম্পূর্ণরূপে অচল হয়ে পড়ে। তখন বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর দ্রুত ক্যামেরাগুলো সচল করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষায় পরবর্তীতে বিসিসি কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করেনি।

আজ সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে

বরিশালে ৪২০টি সিসিটিভি ক্যামেরা ৫ বছর ধরে অচল

আপডেট সময় : ১০:২১:২০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৩

ডিজিটাল যুগ পার করে বাংলাদেশ যখন স্মার্ট যুগে হাঁটছেন ঠিক সেই সময়ও অন্ধকার যুগে পড়ে রয়েছে বিভাগীয় শহর বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকা। ক্ষমতার পালাবদলে বিসিসিতে মেয়র এসেছেন আবার চলেও গেছেন। কিন্তু নগরবাসীর নিরাপত্তা বিবেচনায় ছিল না কোন মাথাব্যথা। ফলে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা ৪২০টি সিটি ক্যামেরা অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে টানা ৫ বছর ধরে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের তত্ত্বাবধানে ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে বসানো হয়েছিল ৪২০টি সিসি ক্যামেরা। এর সঙ্গে নগরভবনে করা হয়েছিল এর কন্ট্রোল রুম। ক্যামেরাগুলো স্থাপনের কিছুদিন যেতে না যেতেই বেশিরভাগই অচল হয়ে যায়। ক্যামেরাগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা বিসিসি কর্তৃপক্ষের থাকলেও বিগত পাঁচ বছরে তারা কোনো ধরনের খোঁজখবর নেয়নি। যেকারণে বর্তমানে বেশিরভাগ সিসি ক্যামেরাগুলোর অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারের এতগুলো টাকা খরচ করে ৪২০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হলেও তা নগরবাসীর কোনো ধরনের উপকারে আসেনি।

বরিশাল সিটি করপোরেশনে প্রকৌশল ও প্রশাসনিক দপ্তরের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে আজ পর্যন্ত সিসি ক্যামেরাগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তো দূরের কথা, সামান্য খোঁজখবরও নেয়নি। তবে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ ক্ষমতা গ্রহণের পর এনেক্স ভবন ও সিটি করপোরেশনের মূলভবনে কয়েকটি সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছেন মাত্র।

বিসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার চলতি দায়িত্বে থাকা স্বপন কুমার দাস বলেন, বিগত মেয়রের আমলে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছিল, তবে তার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই। সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে নগরবাসীর সুবিধার্থে ৪২০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হলেও ক্যামেরাগুলো নগরবাসীর কোনো ধরনের উপকারে না আসায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নগরবাসী।

এ ব্যাপারে সচেতন নাগরিক কমিটির জেলার সাবেক সভাপতি প্রফেসর শাহ্ সাজেদা বলেন, বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ যদি নগরবাসীর কাছে জবাবদিহিতার কথা চিন্তা করতো তাহলে অবশ্যই সরকারের কোটি টাকা ব্যয়ে লাগানো সিসি ক্যামেরাগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতেন।

বিসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের ক্ষমতার আমলে ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয় ৪২০টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হলেও ৫ বছর ধরে সব ক্যামেরাই অচল অবস্থায় রয়েছে। তবে কি কারণে ক্যামেরাগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি সে বিষয়টি আমার জানা নেই।

বাসদের জেলা শাখার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, জনগণের অর্থ ব্যয় করা এই সিসি ক্যামেরাগুলো নগরবাসীর কোনো কাজেই আসেনি। এটা জনগণের সঙ্গে এক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বিসিসি। এটা বিসিসির ব্যর্থতাই মনে করছি। তাই অবিলম্বে এই ক্যামেরাগুলো সচল করে নগরবাসীকে নিরাপত্তাহীনতার হাত থেকে রক্ষা করা হবে বলে আমি আশা করছি।

মনীষা চক্রবর্তী আরও বলেন, নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপিত ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার সবই অচলাবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে ক্যামেরাগুলো অচল থাকার কারণে নগরীতে দিনদুপুরে অপরাধে মাত্রা বেড়েই চলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অজান্তেই অনেকটা নিরাপদে পালিয়ে যাচ্ছে অপরাধী চক্রের সদস্যরা।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, নগরবাসীর নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনা ঘিরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছিল। চালু হওয়ার দুই মাসের মাথায় এসব ক্যামেরার প্রায় ৮০ ভাগ সংযোগ তার (অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল) চুরি হয়ে যায়। আবার বেশ কিছু ক্যামেরায় কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়।

ফলে এসব ক্যামেরা সম্পূর্ণরূপে অচল হয়ে পড়ে। তখন বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর দ্রুত ক্যামেরাগুলো সচল করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষায় পরবর্তীতে বিসিসি কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করেনি।