জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্যদিয়ে পরিবার থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের দুই নিবাসী তামান্না ও রহিমার বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। আর এ বিয়েকে কেন্দ্র করে বিগত সপ্তাহখানেক সময় ধরে সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে চলছে উৎসবের আমেজ।
এখানকার নিবাসীরা জানান, এ নিয়ে পরপর তিনবার দুইজন করে নিবাসীর বিয়ের অনুষ্ঠান একত্রে করছে কর্তৃপক্ষ। আর আয়োজনগুলোতে কোনো কমতি না রেখে এত ধুমধামভাবে করা হয়, কারও বোঝার উপায় নেই যে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো তরুণীর বিয়ে হচ্ছে। বিয়ের আয়োজন মানেই সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের পরিবেশটাই অন্যরকম উৎসবমুখর হয়ে যায়।
এদিকে শনিবার (২৪ জুন) দুপুরে আয়োজিত বিয়ের মধ্যদিয়ে সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে ১৭-১৮ তম বিয়ের অনুষ্ঠান একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হলো বলে জানিয়েছেন জেলা প্রবেশন অফিসার সাজ্জাদ পারভেজ। যেখানে বর ও কনেপক্ষ মিলিয়ে ৩০০ অতিথির খাবারের আয়োজনও করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের নিবাসী রহিমার সঙ্গে বরিশাল নগরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর জাগুয়া এলাকার বাসিন্দা ও দিনমজুর রাসেলের বিয়ে হয়েছে। আর তামান্নার সঙ্গে বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের মানিককাঠি এলাকার বাসিন্দা মুদি দোকানি ফরিদ হোসেনের বিয়ে হয়েছে। যেখানে রহিমা ১০-১২ বছর ধরে এখানে রয়েছে, সে পিরোজপুর থেকে আসলেও তার পরিবারের কারও সন্ধান আমাদের কাছে নেই। অপরদিকে তামান্না ৪-৫ বছর ধরে এখানে রয়েছে। তার বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার পাতারহাটে।
সমাজের ৮-১০টি বিয়ের মতো পূর্বে উভয় পক্ষে দেখাদেখি ও কথাবার্তা সম্পন্ন হয়েই বিয়েতে মত দেওয়ার কথা জানিয়েছেন সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের তামান্না। তিনি বলেন, আগেই পাত্র ও তার পরিবারের সঙ্গে আমাদের স্যারেরা কথা বলেছেন, আমিও কথা বলেছি। উভয়ের মতে এ বিয়ে হচ্ছে। আমার মা ফরিদা বেগমও এসেছেন।
এদিকে রহিমার কেউ না থাকায় তার পাশে পুনর্বাসন কেন্দ্রের নিবাসী, শিক্ষক, কর্মকর্তা সবাই রয়েছেন। আর তাদের অংশগ্রহণে বেশ উচ্ছ্বসিত রহিমা বলেন, স্যারেরা বিয়েতে কোনো কমতি রাখেননি। বিয়ের পোশাক কেনা, পুনর্বাসন কেন্দ্র সাজানো, গান-বাজনার মধ্য দিয়ে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান শেষে এখন বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আমাদের শুধু অনুষ্ঠান করে বিয়েই দিচ্ছে না, সঙ্গে অনেকে উপহারও দেবেন।
বিয়েতে উপহার হিসেবে সেলাই মেশিন, লেপ-তোষক ও প্রতেক্যেকে ৫০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রবেশন অফিসার সাজ্জাদ পারভেজ। তিনি বলেন, বিয়েতে লেপ-তোষকসহ সাংসারিক কাজে প্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। যেটি সব মেয়েদের বিয়েতে বাবার দিয়ে থাকেন। আর ওরা দুজনই সেলাইয়ের কাজ জানেন, তাই সেলাই মেশিন দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া নিজেদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে প্রত্যেক দম্পতিকে ৫০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে।
তামান্নার বর ফরিদ হোসেন ও রহিমার বর রাসেল হোসেন জানান, তারা ঊভয়ই পূর্বে এখানকার একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। সেখানে এসে তাদের পাত্রী পছন্দ হলে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর কথাবার্তা বলে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করেন।
ফরিদের বোন লাকী আক্তার বলেন, আমরা চাই বিয়ে করে দুজনে সুখে-শান্তিতে থাকুক। আর রাসেলের চাচা কবির হোসেন বলেন, আমরা তো এ বিয়েতে বেজায় খুশি। তাদের জন্য আমরা দোয়া করছি। সামনের দিনগুলোতে তার সুখে থাকুক।
এদিকে শুধু বিয়ে দিয়েই দায় এড়াতে নারাজ বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এ বিয়ের আয়োজনে আমরা সবাই খুশি। আমাদের মেয়েরা যাতে ভালো থাকে সেদিকে আমরা খেয়াল রাখবো। শুধু বিয়ে দিয়ে দায়সারা নয়, আমরা ভবিষ্যতে তাদের খোঁজখবর রাখবো। যেমনটা আমার মেয়ের বেলায় রাখা হবে।