পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। এই মহাসড়কের বসাকবাজার এলাকার বাঁকটি যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। বাঁকটি অতিক্রম করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে ছোটবড় যানবাহন।
সোমবার (১৪ আগস্ট) সকাল সোয়া ৬টার দিকে কলাপাড়া চৌরাস্তা সংলগ্ন লাবিবা ক্লাসিক পাঁচজন যাত্রীসহ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আহত যাত্রীদের কলাপাড়া হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
সড়ক ও সজনপথ বিভাগ জানিয়েছে, সড়কটি সোজা করার কাজ চলছে। কাজ সম্পন্ন হতে আগামী বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, এই সড়কে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে দুর্ঘটনা কমে আসবে। এনিয়ে পুলিশ কাজ করছে।
এদিকে দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার খ্যাত পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। বিষয়টি মাথায় রেখে বরিশাল থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশ সম্প্রসারণের কাজ চলছে। এছাড়া এই সড়কের অনেক জায়গায় ওভারটেক করতে গিয়েও দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
দক্ষিণ বল্লভপুর হোসানিয়া দাখিল মাদরাসার সহকারী সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, মাদরাসায় যাওয়া আসার প্রায় সময় দেখি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে সড়কের পাশে গাড়ি পড়ে আছে। মানুষ আহত হয়েছে। নিহত হচ্ছে। নিজেরাও অনেক সময় দুর্ঘটনা কবলিতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। প্রতি সপ্তাহে এখানে অন্তত তিন থেকে চারটি গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে। কত মানুষের যে প্রাণ গেছে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে সরকারের সড়ক বিভাগের গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
আমির আব্দুল্লাহ নামে এক পথচারী বলেন, আমি এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ৪ বার যাতায়াত করি। মাসে অন্তত ২০টি গাড়ি এখানে দুর্ঘটনার শিকার হয়। সবসময় আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করি, কবে যেন আমি নিজেই দুর্ঘটনার শিকার হই। আসলে সড়কটি সোজা করলেই সমাধান হয়ে যায়। সড়কের পশ্চিম পাশে যদি গাছগুলো কেটে দেওয়া হয় এবং কিছু মাটি ভরাট করে সড়কটি সোজা করা হয় তাহলে মনে হয় দুর্ঘটনা কমে আসবে।
পটুয়াখালী জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন মৃধা বলেন, সড়কের বাঁকগুলো সোজা করার জন্য বেশ কয়েকবার সড়ক ও জনপথ বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। আমি যতটুকু জানি এজন্য তারা একটি বরাদ্দ পেয়েছে। হয়তো সড়কের বাঁকগুলো সোজাকরণে তারা কাজ শুরু করবে।
পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মোহম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, যানবাহন চালকদের আরও সচেতন হতে হবে। নির্দিষ্ট গতি মেনে যানবাহন চালাতে হবে। ওই স্থানটিতে যেহেতু একটি বাঁক আছে সেখানে যানবাহনগুলোর গতি কমিয়ে এনে বাঁকটি অতিক্রম করার কথা। কিন্তু অনেকেই তা মানছে না। এ কারণেই বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে।
তিনি জানান, জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা ওই স্থানে এখন থেকে নিয়মিত স্পিডগান নিয়ে অবস্থান করবে। যারা নিয়ম না নেমে অধিক গতিতে যানবাহন চালাবে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। এছাড়া সড়কের যে ত্রুটির কথা বলা হচ্ছে সেটি সংশোধন করার জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে।
পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ এম আতিক উল্লাহ বলেন, পটুয়াখালী-কুয়াকাটা সড়কের বসাকবাজার এলাকার ওই বাঁকটির স্থানে সড়কের পূর্ব পাশে মাটি না থাকায় গাড়িগুলো সেখানে উল্টে যায়। তবে এরইমধ্যে সড়কের পূর্ব পাশে প্যালাসাইনিং করে সেখানে বালু ফিলিং করা হচ্ছে। এছাড়া সড়কটি সোজা করার জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে এজন্য একটু সময় লাগবে। আশা করছি এর ফলে সড়কটি ঝুঁকিমুক্ত হবে।
পটুয়াখালীর লেবুখালী পায়রা সেতু থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। আর এই মহাসড়কে যানবাহনের শৃঙ্খলা রক্ষায় হাইওয়ে পুলিশের কোনো ইউনিট না থাকায় বর্তমানে জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরাই দায়িত্ব পালন করে। পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কটি বর্তমানে দুই লেনের সড়ক হলেও এই সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার জন্য এরইমধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য সড়কের দুই পাশে জমি অধিগ্রহণের জন্য জরিপ কাজ চলছে বলেও জানায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ।